বৃষ্টি প্রকৃতির সবকিছু সতেজ এবং পরিষ্কার করার উপায়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে বেশিরভাগ লোকেরা ঘন মেঘ দেখে আনন্দিত হয়। তারা বৃষ্টিপাতের ফোঁটার মাটির গন্ধ এবং ভবন উপভোগ করে। বৃষ্টি হল একটি পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে একত্রিত হয়ে গরমতেলে ভাজা আর কিছু বর্ষার কবিতা উপভোগ করে। যখন বাইরে, লোকেরা তাদের রঙিন ছাতার নীচে থেকে বৃষ্টি উপভোগ করে, তাদের চারপাশের উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ অনুভব করে। বাচ্চাদের জন্য, বৃষ্টি মানে বন্ধুদের সাথে ভিজতে, জলাশয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং প্রকৃতিকে তার সমস্ত মহিমায় উপভোগ করার একটি সুন্দর সময়। সুতরাং, এটা স্পষ্ট যে বৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় নিয়ে কবিরা উভয় দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সুখী বৃষ্টির কবিতার সংকলন রয়েছে। আপনি আমাদের বর্ষার কবিতার সংগ্রহেও করতে পারেন।
বর্ষার কবিতা – বৃষ্টি, তুমি ও কলকাতা – অরুণাশিস সােম
তোমার ভেতর এক হাঁটু জল জমা, হাঁটছি আমি, সঙ্গে নিয়ে ছাতা, ঝগড়া শেষে ঠোটই বলে ক্ষমা, বৃষ্টি হলে এটাই কলকাতা। আমার কাছে কম সময়ের রেশ, অল্প হলেও প্রেমের কথা শোনা, বৃষ্টি হলে পুরোনো অভ্যেস, পালটাবে না কোনোদিন, কক্ষনো। তুমি আস্তে আস্তে শুকিয়ে নেবে জল, পৌঁছে যাবে আগের মত রোদে, ঘাটের ভিড়ে কাঁদব অনর্গল, হাত বাড়াব ভীষণ প্রতিরােধে। তখন তোমার রুদ্রপ্রতাপ চোখ, আগুন জ্বালায় সমস্ত দিন ধরে, চাইব আমি প্রেমের ভালো হোক, জলীয় হৃদয় বাষ্পে যাবে ভরে। সেটার চেয়ে বৃষ্টি হওয়া ভাল, জমুক যত আঁধার, কান্না, গান, কলকাতা আজ তুমুল অগোছালো, কারণ তোমার বক্ষে অভিমান।
সোনার তরী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা। কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা। রাশি রাশি ভারা ভারা ধান কাটা হল সারা, ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরশা। কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা। একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা, চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা। পরপারে দেখি আঁকা তরুছায়ামসীমাখা গ্রামখানি মেঘে ঢাকা প্রভাতবেলা– এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা। গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে, দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে। ভরা-পালে চলে যায়, কোনো দিকে নাহি চায়, ঢেউগুলি নিরুপায় ভাঙে দু-ধারে– দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে। ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে, বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে। যেয়ো যেথা যেতে চাও, যারে খুশি তারে দাও, শুধু তুমি নিয়ে যাও ক্ষণিক হেসে আমার সোনার ধান কূলেতে এসে। যত চাও তত লও তরণী-‘পরে। আর আছে?– আর নাই, দিয়েছি ভরে। এতকাল নদীকূলে যাহা লয়ে ছিনু ভুলে সকলি দিলাম তুলে থরে বিথরে– এখন আমারে লহ করুণা করে। ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই– ছোটো সে তরী আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি। শ্রাবণগগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে, শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি– যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।
যখন বৃষ্টি নামল – শ্রীজাত
যখন বৃষ্টি নামল তুমি দেশান্তরী আমলকী নাও হাতে… পুঞ্জছায়ায় অঞ্জন এল অন্ধ মেঘে খঞ্জনি বাজাতে। ভিক্ষে করেই যায় দিন তুমি শ্রান্ত মনে সায় দিলে না তবু এ বর্ষা প্রাবন্ধিক। দ্যাখো লেখার পরে কোনদিকে যায় সবুজ, আমিই তোমার ডাকনাম এই নকশাকাটা পাখনাতে দিই উড়াল পুনর্বাসন ঝঞ্ঝা জানি ভালইবাসে রঞ্জাকে, বন্ধুরা। মেঘের মতো মিথ্যে কেন মরতে এলাম শীত থেকে, বর্ষাতে যখন বৃষ্টি নামল তুমি দেশান্তরী আমলকী নাও হাতে…
একটি বৃষ্টির জন্য – প্রদীপ বালা
আমি তার আসার জন্য কখনই প্রস্তুত থাকতাম না তবুও সে আসতো, আকাশ কালো করে সোঁ সোঁ শব্দ করতে করতে তেড়ে আসতো, আর তীরের ফলার মতো বিঁধতে চাইত শরীরে কানে সুড়সুড়ি দিত…… তখন হয়তো পলতার জলে সবেমাত্র ফাতনা গিলছে কোন বেবোধ মাছ আর আমি টান দেব বলে…… সেই সময় খালের অপারে সোঁ সোঁ শব্দ সাথে সাথে ছিপে আলপটকা টান মেরে ছুটতাম মাঠ পেরিয়ে পেছনে সোঁ সোঁ শব্দে তেড়ে আসতো বৃষ্টি প্রাণপণে ছুটতে ছুটতে শুনতাম কারও কারও গলার আওয়াজ অমুকের মা কিম্বা তমুকের ঠাকুমারা সব হাঁটু অব্দি কাপড় তুলে মাঠে দাঁড়িয়ে ডাকছে ডাকছে তাদের অবাধ্য বাছুর গুলোকে আয় আয় আয়… ডাকছে তাদের অবাধ্য ছাগলের পাল কে, আয় আয় আয়… ডাকছে তাদের অবাধ্য মুরগী গুলোকে, আয় আয় টিটি টিটি…টিটি… অথবা তাদের অবাধ্য হাঁস গুলোকে, আয় আয় চৈচৈ চৈচৈ…চৈচৈ… থমকে পেছনে তাকাতেই বৃষ্টি এসে আছড়ে পড়ত শরীরে বাড়ি ফিরে ছিপ রাখতে রাখতেই দেখতাম খেলার মাঠে ফুটবল নিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে এক দঙ্গল ছেলেপেলে সবারই খালি গা… দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া তাদের মধ্যে কাউকে হয়তো চিত করে ফেলা কারোবা পায়ের ফাঁক দিয়ে স্লিপ কেটে চলে যাওয়া দুম করে আছাড় খেয়ে পড়া তারপর– মুখ বেঁকিয়ে খিস্তি– . ‘কাছে আয় ক্যাামোন বাটাম দিই বুকাচ্চু…’ এই প্রক্রিয়া ততক্ষন পর্যন্ত চলত যতক্ষণ না কেউ চ্যালাকাঠ নিয়ে তেড়ে আসছে বাড়ি থেকে… তবুও সেসব দিনে বৃষ্টি আসতো নিয়ম করে আর আজ এই শহরের রাস্তায় বহুদিন পরে আবিষ্কার করলাম আর এক বৃষ্টিকে যাবার সময় সে বলে গেল আবার ফিরবে বিকেলে… আমি সেই থেকে দাঁড়িয়ে আছি ল্যামপোস্টের মতো ফুটপাতে মাথা নীচু করে আর সেই পথ দিয়ে যাওয়া শহরের যত বেখেয়ালী কুকুরের দল যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে আমার পায়ের কাছে পেচ্ছাব করে গেল বেখেয়ালি পথচারীরা পানের পিক দিল গায়ে . থুতু ছিটোলো… আমি তবু দাঁড়িয়ে রইলাম, বৃষ্টি আসবে বলে… অথচ সে এলই না। কথা দিয়ে কথা রাখল না! কিন্তু কি আশ্চর্য, বেখাপ্পা শব্দগুলো একের পর এক জুড়ে গিয়ে খাতা ভর্তি করে দিল……
একটি বৃষ্টির সন্ধ্যা – জয় গোস্বামী
চোখ, চলে গিয়েছিল, অন্যের প্রেমিকা, তার পায়ে। যখন, অসাবধানে, সামান্যই উঠে গেছে শাড়ি— বাইরে নেমেছে বৃষ্টি। লন্ঠন নামানো আছে টেবিলের নীচে, অন্ধকারে মাঝে মাঝে ভেসে উঠেছে লুকোনো পায়ের ফর্সা আভা… অন্যায় চোখের নয়। না তাকিয়ে তার কোনো উপায় ছিল না। সত্যিই ছিল না? কেন?—হুহু করে বৃষ্টিছাট ঢুকে আসে ঘরে সত্যিই ছিল না? কেন?—কাঁটাতারে ঝাঁপায় ফুলগাছ সত্যিই ছিল না? কেন?—অনধিকারীর সামনে থেকে সমস্ত লুকিয়ে নেয় নকশা-কাটা লেসের ঝালর… এখন থেমেছে বৃষ্টি। এখন এ-ঘর থেকে উঠে গেছে সেও। শুধু, ফিরে আসছে হাওয়া। শুধু, এক অক্ষমের চোখের মতন মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে টেবিলের তলার লন্ঠন।
আরও পড়ুন
- বর্ষা দিনে – উদয় দেবনাথ
- আমার শহরঃ বৃষ্টিমানুষ – প্রদীপ বালা
- রংমশাল – শ্রীজাত
- যায় – শ্রীজাত
- প্রিয় চড়াই– শ্রীজাত
- বৃষ্টি ও মেয়েটি – বৈশালী চ্যাটার্জী
- প্রেমিক জনের চিঠি ২ – শ্রীজাত
- বৃষ্টিশেষের গ্রামটি – শ্রীজাত
- সহজ – জীবনানন্দ দাশ
- ইলশে গুঁড়ি – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
- এখন – তারাপদ রায়
- সমাধি – শ্রীজাত
- নিশ্চুপ যাপন – টুটুল দাস
- পান্থ – শ্রীজাত
- বর্ষার চিঠি – শ্রীজাত
- বৃষ্টি বলুক – শ্রীজাত
- বৃষ্টি বিকেল – শ্রীজাত
- বালিকার জন্য রূপকথা — জয় গোস্বামী
- লা নত্ত্যে – শ্রীজাত
- অসূয়া – শ্রীজাত
- আমাকে ক্ষমা কোরো না চে – প্রদীপ বালা
- ভূতের গল্প – শ্রীজাত