আমার শহরঃ বৃষ্টিমানুষ – প্রদীপ বালা

মেঘ জমেছে তোরই বাড়ির ছাদের ওপর
এদিক ওদিক একটা দুটো বৃষ্টিমানুষ
একটু পরেই ভিজবে বসে আমার শহর
ভাসছে হাওয়ায় ইচ্ছে যত ফালতু ফানুস

###

ইচ্ছে আছে জমিয়ে টাকা বাইক নেবার
তারপরে চল তুই আর আমি লং ড্রাইভে
থাক পেছনে আইবুড়ো বোন অসুখ বাবার
কিছুটা সময় হারিয়ে যাব দিগ্বিদিকে

এমনি কত ইচ্ছে ফানুস হাওয়ায় ভাসে
এই শহরের মেসে মেসে রাস্তা ঘাটে
দিনের শেষে সেসব ইচ্ছে হয় ফ্যাকাশে
সেসব আবার করতে রঙিন রাতটা কাটে

আমি তখন ভীড় বাসেতে বাদুড় ঝোলা
ঘামের ঘ্রানে মাখামাখি নারী পুরুষ
অফিস যেতে যেসব মেয়ে সেক্সি শীলা
অফিস ফেরত তারাই সবাই বেলুন ফুটুস

‘আজ একটু অফিস থেকে জলদি ফিরিস
ময়দানে আর ভিক্টোরিয়ায় ভিজবো দুজন’
মেসেজ দেখে আদম হতে চাইছে শরীর
ইভের সাথে একটা বিকেল আর কতক্ষণ

নিয়ম মাফিক বসের ঘরে ডাক পড়ে যায়
মহিলা বস স্বামী আছে অন্যখানে
মাঝে মাঝেই চাকরী খাওয়ার ভয় দেখায়
কী কারণে মন তো আমার সবই জানে!

আমি তখন পোশাক ছেড়ে নগ্ন হলাম
করুক সে তার ইচ্ছে মত যা ইচ্ছে তাই
চোখে আমার ভাসতে থাকে ইভের শরীর
ধাক্কা মেরে ধাক্কা মেরে চাকরি বাঁচাই

###

‘আজ বুঝি অফিস ঘরেই সেরে দিলি?
বেশ পেয়েছিস মাল খানা তুই মনের মতন
আমার শালা পোড়া কপাল পুরো খিল্লি
একটা দুটো পেতাম যদি গরীব রতন

ইচ্ছে মতন উলটে পালটে করিয়ে নিতাম
না শুনলে আমার কথা একটু খানি
যখন তখন চাকরী খাওয়ার ভয় দেখাতাম
ছলা কলা আমিও কি আর কম জানি’

সহপাঠী বয়স ওর আমার মতোই
ছেলে মেয়ে দুটোই এবার ফাইনাল ইয়ার
যৌবন আছে পাক ধরে যাক চুলে যতই
এক টানেতেই সাবাড় করে চারটে বিয়ার

‘আজ বিকেলে তোর বর দেখি সেই হোটেলে
হাঁটুর এজের একটা মেয়ের কোমর ধরে…’
এসব কথা এখন মোটেও নতুন নয়
বেশ বুঝেছি বিয়ের সেই এক বছরে

প্রথম প্রথম ঠিকই ছিল হটাত করে
অফিস মিটিং বেড়ে গেল ছ মাসেতেই
আমারও তো অফিস আছে বুঝি না কি?
ধরাও খেল কিছু বলিনি ইচ্ছে করেই

রাগ হল না বরং ফুর্তি এল মনে
ভাবনা নেই আমার এখন যত ইচ্ছে
ঘুরব ফিরব শোব যাকে চাইবে প্রাণে
এমনি করে করে বেশতো চলে যাচ্ছে

###

যাক চলে যাক অবাধ্য সব মেসেজ যত
মাসের শেষে কাজের ওপর চোখ সরে না
আর কটা দিন পরেই একটু খুশি পাবো
এবার তবে রিপ্লাই দাও লক্ষ্মী সোনা

কাজের মাঝেও ভাবনা আসে ঘুরে ফিরে
সারা অফিস কাজের ভারে সময় নেই
তবু আমার মন থাকে সেই মেসেজ জুড়ে
রিপ্লাই নেই রিপ্লাই নেই রিপ্লাই নেই

নতুন প্রজেক্ট ধুয়ে মুছে শেষ করেছি
ইচ্ছে করে মারব ছুঁড়ে বসের মুখে
থমকে থাকি জীবন যুদ্ধে হার মেনেছি
চাকরী বাঁচে শুধুই শুধুই শরীর দেখে

হটাত করেই মোবাইলটা জানান দিল
শরীর বেয়ে উত্তেজনার ঢেউ খেলে যায়
ওইতো বুঝি আদমেরই মেসেজ এল
বসের মেসেজ শরীর আবার শীতল হয়

‘তাড়াতাড়ি চলে এস না শুনবো না
করনি তো কিছুই এবার এই প্রজেক্টে’
সারা শহর জুড়েই যেন বেশ্যাখানা
এমনি করেই চলছে যে কাজ কর্পোরেটে

ঘণ্টা খানেক শরীর খুলে বসের চোখে
জিভ দিয়ে তোর ইভের শরীর নষ্ট করুক
কি করে যে মুখ দেখাবো আদম তোকে
বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক

###

বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক
ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক ময়লা যত
দুটো শরীর ভিজে ভিজে হচ্ছে সারা
ভিজছে আরও শরীর জুড়ে শত ক্ষত

অন্ধকারের পর্দা নামে শহর ঘিরে
সাথে সাথে নিয়ন বাতি ঝলসে ওঠে
ইচ্ছে করে বসেই থাকি অন্ধকারে
বাতির আলো আমাদেরও শরীর চাটে

কত কথাই লুকিয়ে থাকে মনের ভেতর
কত গ্লানি ধুয়ে যায় বৃষ্টি জলে
এসব নিয়েই জেগে থাকে আমার শহর
বহন করে কত কথা বৃষ্টি জলে

এমনি ভাবেই দুঃখ বাড়ে রোজ বহরে
বৃষ্টি ভিজে চুপসে যায় ইচ্ছে ফানুস
কত জনায় ভিজছে বসে এই শহরে
………………………..সবাই তারা
বৃষ্টিমানুষ বৃষ্টিমানুষ বৃষ্টিমানুষ

আরও পড়ুন

Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *